ব্রেকিং নিউজ

Showing posts with label SELECTED ARTICLES. Show all posts
Showing posts with label SELECTED ARTICLES. Show all posts

Tuesday, June 30, 2020

5:36 PM

তাকসিমে সাবয়ীর অসারতা

তাকসিমে সাবয়ী এর পরিচয়:

 তাকসিমে সাবয়ী এর অর্থ হলো, সাত প্রকারে বিভক্ত করণ। সহীহ হাদীস সাত প্রকার এবং প্রত্যেক উপরের প্রকার নীচের প্রকারের চেয়ে তুলনামূলক বেশি সহীহ। প্রকারগুলো এই-
এক. যে হাদীস সহীহ বুখারী ও সহীহ মুসলিম উভয় কিতাবে আছে।
দুই. যে হাদীস শুধু সহীহ বুখারী শরীফে আছে।
তিন. যা শুধু সহীহ মুসলিমে আছে।
চার. যা সহীহ বুখারী ও মুসলিমে নেই তবে এই দুই কিতাবের মানদন্ডে সহীহ।
পাচ. যে হাদীস শুধু বুখারীর মানদন্ডে সহীহ।
ছয়. যা শুধু মুসলিমের মানদন্ডে সহীহ।
সাত. যে হাদীস বুখারী মুসলিমেও নেই, না এই দুই কিতাবের মানদন্ডে সহীহ। তবে অন্য কোনো ইমাম এক সহীহ বলেছেন। 

তাকসিমে সাবয়ীর আবিষ্কারক:

মুহাদ্দিস ইবনুস সালাহ রহমাতুল্লাহি আলাইহি সর্বপ্রথম তাকসিমে সাবয়ীর এই ধারণা প্রকাশ করেন। হিজরী সপ্তম শতাব্দীতে সহীহ হাদীসের এই প্রকারভেদ আবিষ্কার হওয়ার পর অনেক লেখক স্বীয় কিতাবে তা উল্লেখ করেছেন।
তাকসীমে সাবয়ীর অসারতা:
অনেক মুহাক্কিক আলেম বাস্তবতার বিচারে বলেছেন, এই প্রকারভেদ হাদীসের উসূলের আলোকে সহীহ নয়। কেননা, সহীহ হাদীসের প্রকার ও পর্যায় নির্ধারিত হয় হাদীস সহীহ হওয়ার শর্ত ও বৈশিষ্টের ওপর ভিত্তি করে, বিশেষ কোনো কিতাবে থাকা না থাকার ভিত্তিতে নয়।
তাকসিমে সাবয়ী
মুফতি রেজাউল করিম
যেমন অনেক হাদসি শুধু সহীহ বুখারীতে আছে মুসলিমে নেই কিন্তু তার সনদ মুসলিমের মানদন্ডেও সহীহ। এ ধরণের হাদীসকে দ্বিতীয় শ্রেণীতে নেওয়ার কোনো অর্থ হয় না। তেমনি কোনো হাদীস বুখারী শরীফে নেই তবে শুধু মুসলিম শরীফে আছে কিন্তু তার সনদ ইমাম বুখারীর নিকটও সহীহ। এ হাদীসকে তৃতীয় শ্রেণীর অন্তর্ভূক্ত করা কি অর্থহীন নয়? তেমনি ভাবে যেসব হাদীস উভয় ইমামের মানদন্ডে সহীহ সেগুলোকে কি শুধু এই দুই কিতাবে না থাকার কারণে চতুর্থ শ্রেণীতে চলে যাবে।

আরো পড়ুন করোনা পরিস্থিতিতে জামাতের নামাজে এক মুসল্লি অপর মুসল্লি থেকে দূরত্বে দাঁড়াতে পারবে কিনা?

যারা এ তাকসিমে সাবয়ীর সমালোচনা করেছেন:

এই প্রকারভেদকে শাস্ত্রীয় নীতি হিসেবে গ্রহণ করা যায় না। তাই অনেক আহলে ইলম এই তাকসিমের কঠোর সমালোচনা করেছেন। যেমন হাফেয ইবনে হাজার আসকালানী রহমাতুল্লাহি আলাইহি পরিষ্কার ভাষায় বলেছেন,
اما لو رجح قسم علي ما فوقه بامور أخري تقتضي الترجيح فانه يقدم علي ما فوقه
 اذ قد يعرض للمفوق ما يجعله فاءقا
অর্থাৎ অগ্রগণ্যতার অন্যান্য কারণে কোনো প্রকার যদি তা উপরস্থ প্রকারের চেয়ে অগ্রগামী হয় তাহলে তাকে তার উপরের প্রকারের চেয়ে অগ্রগণ্য করা হবে। কারণ, এই বিন্যাসে উল্লিখিত নিচের প্রকারের বর্ণনার সাথে কখনো কখনো এমন গুণাবলী যুক্ত হয়, যা তাকে উপরের পর্যায়ের বর্ণনার সমকক্ষ বা অগ্রগণ্য করে। [ শরহু নুখবাতিল ফিকার-৩২]
আল্লামা ইবনুল হুমাম রহমাতুল্লাহি আলাইহি তাকসীমে সাবয়ী প্রত্যাখান করতে গিয়ে বলেন,
وقول من قال: اصح الاحاديث ما في الصحيحين ثم ما انفرد به البخاري ثم ما انفرد به مسلم ثم ما اشتمل علي شرطهما من غيرهما ثم ما اشتمل علي شرط احدهما : تحكم لا يجوز التقليد فيه
অর্থাৎ যারা বলেন যে, অধিক বিশুদ্ধ হাদীস হলো, যে হাদীস সহীহ বুখারী ও সহীহ মুসলিম দুই কিতাবেই আছে। যা শুধু সহীহ মুসলিমে আছে । যা এই দুই কিতাবে নেই তবে এই দুই কিতাবের মানদন্ডে সহীহ। যা শুধু বুখারীর মানদন্ডে সহীহ। যা শুধু মুসলিমের মানদন্ডে সহীহ। যা না এই দুই কিতাবে আছে না এই দুই কিতাবর মানদন্ডে সহীহ। তবে অন্য কোনো ইমাম একে সহীহ বলেছেন। এটা হটকারীতা এর তাকলীদ বা অনুসরণ করা জায়েয নেই। [ ফাতহুল কাদীর ১/২৮৮-২৮৯]


আল্লামা জালালুদ্দিন সুয়ূতী রহমাতুল্লাহি আলাইহি পরিস্কার লিখেছেন যে,
اطلاق اصح الاسانيد علي بعض الاسانيد او يصح ذلك من حيث المجموعية دون كل فرد فرد من الاحاديث
 অর্থাৎ সহীহ মুসলিমের তুলনায় সহীহ বুখারী অধিক সহীহ হওয়ার অর্থ হলো, সমষ্টিগত বিচারে অধিক সহীহ হওয়া। এই নয় যে, সহীহ বুখারীর প্রতিটি হাদীস সহীহ মুসলিমের প্রতিটি হাদীসের চেয়ে অধিক সহীহ। [তাদরীবুর রাবী ১/৮৮)
আল্লামা যারকাশী রহমাতুল্লাহি আলাইহি লিখেছেন, অগ্রগণ্যতার কারণ বিচারে মুহাদ্দিসগণ কখনো কখনো সহীহ মুসলিমের হাদীসকে বূখারীর হাদীসের উপর প্রাধান্য দিয়ে থাকেন।

ইমাম আবু বকর হাযেমী রহমাতুল্লাহি আলাইহি এক হাদীসকে অন্য হাদীসের উপর প্রাধান্য দেওয়ার পঞ্চাশটি কারণ উল্লেখ করেছেন। সেসব ‘প্রাধান্য দেওয়ার কারণসমূহের’ মধ্যে বুখারী ও মুসলিমে বর্ণিত হাদীস যে প্রাধান্য পাবে তার উল্লেখ নেই। বরং তিনি বলেছেন  এক হাদীস অন্য হাদীসের উপর প্রাধান্য পায় রাবীর গ্রহণযোগ্যতার কারণে। হাদীসটি কোন কিতাবে বর্ণিত হয়েছে সে বিবেচনায় নয়।
[আল ই’তিবার ফিন নাসিখ ওয়াল মানসুখ-৫৮-৯০]
হাফেয ইরাকি রহমাতুল্লাহি আলাইহি একশত দশটি “উজুহে তারজীহ” উল্লেখ করেছেন। তম্মধ্যে বুখারী মুসলিমের হাদীসকে ১১০ নাম্বারে গণ্য করেছেন।
আব্দুর রশীদ নুমানী রহমাতুল্লাহি আলাইহি বলেন, হাফেয ইবনুস সালাহ রহমাতুল্লাহি আলাইহি এর পূর্বে তাকসীমে সাবয়ীর প্রবক্তা কেউ ছিলো না। তার পরবর্তীতে কেউ কেউ তার অনুসরণ করেছেন। কিন্তু হাফেয ইমাদুদ্দিন ইবনে কাসির রহমাতুল্লাহি আলাইহি “ইখতিসার ফি উলুমুল হাদীসে” তাকসীমে সাবয়ীর উল্লেখ করেননি। এর দ্বারা বুঝা যায় তিনি এর অনুসরন করেননি। বরং তিনি স্পষ্ট ভাবে বলেছেন, ‘মুসনাদে ইমাম আহমাদে’ এমস সনদ ও মতন রয়েছে যা বুখারী মুসলিমের সমপর্যায়ের। যা ইমাম বুখারী ও মুসলিম বর্ণনা করেননি। এমনকি আইম্মায় আরবায়া ও বর্ণনা করেননি।

Saturday, June 27, 2020

10:55 AM

ফতোয়া প্রদানে সতর্কতা : মুফতি তকী উসমানী

ফতোয়া প্রদানে সতর্কতা অবলম্বন : মুফতি তকী উসমানী,ইমাম মালেক রহমাতুল্লাহি আলাইহি
মুফতি তকী উসমানী
মুফতির দায়িত্ব তো অনেক বড় একটি দায়িত্ব। এটি এমন বড় এক দায়িত্ব যে, আল্লামা ইমাম নববী রহমাতুল্লাহি আলাইহি এবং আল্লামা ইবনুল কাইয়ুম রহমাতুল্লাহি আলাইহি একে “আল্লাহ তায়ালার পক্ষ থেকে অনুমোদন” বলে আখ্যায়িত করেছেন। যখন কোনো মুফতি ফতোয়া দেন, তখন তিনি যেন বাস্তবে আল্লাহ তায়ালার পক্ষ থেকে সে ফতোয়ায় সাক্ষর করেন।

কোনো বিষয় হালাল নাকি হারাম এ বিষয়ে কেউ জিজ্ঞেসিত হলে, আল্লাহ তায়ালা বলেন,এটা তার দায়িত্ব নয় যে, তিনি 
নিজ থেকে এটা বলে দিবেন যে, এটা হালাল বা হারাম। এটাতো আসলে আল্লাহ তায়ালার কাজ। কোনো বিষয় সম্পর্কে আমরা যদি এটা বলে দেই যে, এ বিষয়টি শরীয়তে হালাল । তাহলে মূলত আমরা আল্লাহ তায়ালার পক্ষ থেকে তার প্রতিনিধি হয়েই যেন তা বলি। এটাই হলো, “ আল্লাহ তায়ালার পক্ষ থেকে সাক্ষর বা অনুমোদন করা”।


ইমাম মালেক রহমাতুল্লাহি আলাইহি এর মত এত বড় মানুষ এ ব্যাপারে কতটা সতর্ক ছিলেন দেখুন। “ আমি ফাতহুল বুইয়ু ও তাকমিলায় ফাতহুল মুলহিম লিখতে গিয়ে চারো মাযহাবের ফিক্বহের কিতাবগুলো অধ্যয়নের চেষ্টা করেছি। যে পরিমাণ যাচাই-বাছাই , তাহকীক ও গবেষণা  ইমাম মালেক রহমাতুল্লাহি আলাইহির মাযহাবে আমি দেখেছি তা অন্য কোনো মাযহাবে আমি পাইনি”। 
তার মাযহাবে যত শাখাগত মাসয়ালা আমার চোখে পড়েছে অন্য কোনো মাযহাবে আমার চোখে তা পড়েনি। তা
সত্তেও ইমাম মালেক রহমাতুল্লাহি আলাইহি বলেন, আমার সমকালীন ৭০ জন আলেম আমাকে অনুমতি না দেওয়া পর্যন্ত আমি ফতোয়া প্রদান শুরু করিনি। যখন ৭০ জন আলেম আমাকে এ কথা বলে দিলেন যে, এখন তুমি ফতোয়া দিতে পারো। তখন আমি ফতোয়া দেওয়া শুরু করলাম।

ইমাম মালেক রহমাতুল্লাহি আলাইহি এত বড় আলেম হওয়া সত্তেও কখনো ‘আমি জানি না’ বলতে লজ্জাবোধ করতেন না। তার এক ছাত্র বলেন, একদা আমি ইমাম মালেক রহমাতুল্লাহি আলাইহি এর কাছে বসা ছিলাম। একের পর এক লোকজন এসে ইমাম মালেক রহমাতুল্লাহি আলাইহি কে বিভিন্ন বিষয় জিজ্ঞাসা করছিলো। প্রতিটি প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেছিলেন, ‘আমি জানি না, আমি জানি না’। তিনি প্রশ্নের সংখ্যা উল্লেখ করেছেন এবং বলেছেন যে, অধিকাংশ মাসয়ালার ক্ষেত্রে ইমাম মালেক বলেছেন ‘আমি জানি না’।


অথচ আল্লাহ তায়ালা ইমাম মালেকের মাধ্যমে এত কাজ আঞ্জাম দিয়েছেন যে, তা গণনা করা সম্ভব নয়। একবার এক ব্যক্তি কোনো প্রশ্নের বিষয়ে তাকে বললেন যে, এটাতো একদম সহজ একটি মাসয়ালা। তখন ইমাম মালেক রহমাতুল্লাহি আলাইহি বললেন, “ ফিক্বহের মধ্যে সহজ বা হালকা বলতে কোনো কিছু নেই”।

এ জন্য কোনো বিষয়ে নিশ্চিত জ্ঞান অর্জিত না হওয়া পর্যন্ত আমরা এর উত্তর দিতে পারি না। জ্ঞানের এত বড় সমুদ্র হওয়া সত্তেও ফতোয়া প্রদানের ক্ষেত্রে ইমাম মালেক রহমাতুল্লাহি আলাইহি এর সতর্কতার অবস্থা ছিলো এই। আল্লাহ তায়ালা স্বীয় রহমত দ্বারা আমাদের ( সতর্কতা অবলম¦ন না করেই ফতোয় প্রদানের) এই মুসিবত থেকে হেফাযত করুন।


বুযুর্গানে দ্বীন বলেন, যখন কোনো ব্যক্তি কোনো মুফতি সাহেবের কাছে কোনো বিষয়ে ফতোয়া জানতে চান। তখন এই প্রশ্নকারী যেন উত্তরদাতা মুফতি সাহেবকে প্রশ্নকারী নিজের ও জাহান্নামের মাঝে একটি মাধ্যম বানিয়ে নেয়।
সে এটি ঠিক করে নেয় যে, বিষয়টির কারণে আমি জাহান্নামে যাবো না। বরং এ বিষয়টিকে হালাল বা হারাম বলে দেওয়ায় এর সব দায় দায়িত্ব মুফতি সাহেবের কাধে বর্তাবে। ভুল ত্রুটি যা হবে আল্লাহর কাছে মুফতি সাহেব জবাবদিহিতা করবেন।

আব্বাজান মুফতি শফী রহমাতুল্লাহি আলাইহির কাছে শুনেছি, ইমাম মুহাম্মাদ বিন হাসান শায়বানী রহমাতুল্লাহি আলাইহি কে একবার জিজ্ঞেস করা হয়েছিলো যে, আমরা সব সময় আপনাকে চিন্তিত অবস্থায় দেখি। অন্য লোকদের যেমন হাসি খুশি দেখি আপনাকে তেমন দেখি না কেনো? ইমাম মুহাম্মাদ রহমাতুল্লাহি আলাইহি বললেন, ওই ব্যক্তির অবস্থা আর কী হতে পারে যার কাধকে মানুষ জান্নাত জাহান্নামে যাওয়ার জন্য সেতু বানিয়েছে ? ভুল ত্রুটির সমস্থ দায়ভার ওই লোকের কাধে ছেড়ে দিয়ে সেই কাধকে মানুষ সেতু বানিয়ে জান্নাত জাহান্নামে যায়? 


এক দিকে এই ছিলো ফতোয়া প্রদানের ক্ষেত্রে এ ইমামগণের সতর্কতার অবস্থা। ইমাম মালেক রহমাতুল্লাহি আলাইহি ইমাম আবু হানিফা রহমাতুল্লাহি আলাইহি ও ইমাম শাফেয়ী রহমাতুল্লাহি আলাইহি এর সতর্কতার অবস্থা। ইমাম শাফেয়ী রহমাতুল্লাহি আলাইহি বলতেন, যখনই কোনো ব্যক্তি আমাকে কোনো মাসয়ালা জিজ্ঞাসা করে তখন আমি অল্প সময়ের জন্য জান্নাত ও জাহান্নামের দুটোর সামনেই পেশ করি।

আমি চিন্তায় পড়ে যাই যে, এই প্রশ্নের উত্তর আমাকে জান্নাতে নিয়ে যাবে নাকি জাহান্নামে নিয়ে যাবে। সতর্কতার অবস্থা ছিলো এই । অথচ আজ কাল ফতোয়া প্রদানকে এমন তুচ্ছ বিষয় বানিয়ে ফেলা হয়েছে যে, প্রত্যেকেই মুফতি সাহেব সাজতে প্রস্তুত। আর বলতে চায় এটা আমার মত, এটা আমার ফতোয়া। আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে হেফাযত করুন।

Friday, March 20, 2020

8:48 AM

করোনা থেকে বাঁচতে সতর্কতার পাশাপাশি যেসব আমল করবেন: মুফতি মনসূরুল হক




১. সর্বপ্রথম নিজের ঈমান আমলকে সংশোধন করা। পবিত্র কুরআনে মহান আল্লাহ তা‘আলা ইরশাদ করেন-

وَمَا كَانَ رَبُّكَ لِيُهْلِكَ الْقُرَى بِظُلْمٍ وَأَهْلُهَا مُصْلِحُونَ অর্থ : আর আপনার রব এমন নন যে, তিনি জনপদসমূহকে অন্যায়ভাবে ধ্বংস করে দেবেন অথচ তার অধিবাসীরা সৎকর্মে লিপ্ত রয়েছে। (সূরা হুদ : ১১৭)

২. দুই নম্বর কাজ হলো-আকীদা সহীহ করা। পবিত্র কুরআনে কারীমে মহান আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন,

قُلْ لَنْ يُصِيبَنَا إِلَّا مَا كَتَبَ اللَّهُ لَنَا هُوَ مَوْلَانَا وَعَلَى اللَّهِ فَلْيَتَوَكَّلِ الْمُؤْمِنُونَ অর্থ: হে নবী! আপনি বলে দিন! আল্লাহ আমাদের জন্য (তাকদীরে) যা লিখে রেখেছেন তা ছাড়া অন্য কোনো কষ্ট আমাদেরকে কিছুতেই স্পর্শ করবে না। তিনিই আমাদের অভিভাবক। আর আল্লাহর উপর মুমিনদের ভরসা করা উচিত। (সূরা তাওবা; আয়াত ৫১)

কাজেই যে কোনো বালা-মুসীবত ও মহামারিতে মুমিন বান্দার প্রথম কাজ হলো নিজের আকীদা বিশ্বাস দৃঢ়
করা যে, আল্লাহ তাআলা যদি আমার তাকদীরে লিখে রাখেন, তবে তা কোনভাবেই আটকানো সম্ভব নয়। সেক্ষেত্রে

আল্লাহ তাআলাই আমাকে সুস্থতা দান করবেন, মারা গেলে ‘শহীদ’ এর মর্যাদা তথা বিনা হিসেবে জান্নাত
দান করবেন। আর যদি আমার তাকদীরে এ রোগ না লিখে থাকেন, তবে এ রোগ আমার কক্ষনো হবে না।
এর পাশাপাশি এ বিশ্বাস রাখতে হবে যে, করোনা ভাইরাস কোনো রোগ ছোঁয়াচে রোগ নয়। বরং আল্লাহ
তাআলা তাকদীরে রেখেছেন-এ জন্য হয়েছে। হাদীসে পাকে ইরশাদ হয়েছে-নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম বলেন- ولا عدوى،অর্থাৎ ছোঁয়াচে রোগ বলতে কিছু নেই!’ এক সাহাবী জিজ্ঞাসা করলেন যে, ইয়া
রাসূলুল্লাহ! আমরা একটি খুজলিযুক্ত বকরী অন্যান্য (সুস্থ) বকরীর মাঝে রেখে দিলে সেগুলোও তো খুজলি রোগে

আক্রান্ত হয়ে যায়! নবীজী বললেন, ‘ فمن أعدى الأول ‘তাহলে প্রথম বকরীটি কী কারণে আক্রান্ত হলো?’ অর্থাৎ
প্রথম বকরীটি যেভাবে আল্লাহর হুকুমে আক্রান্ত হয়েছে, তেমনি অন্যগুলোও আল্লাহর হুকুমে আক্রান্ত হয়েছে।
(মুসনাদে আহমাদ; হা.নং ৩০৩১)

৩. বেশি বেশি ইস্তেগফার করা তথা আল্লাহর কাছে নিজ গোনাহের জন্য ক্ষমা চাওয়া। পবিত্র কুরআনে মহান
আল্লাহ তা‘আলা ইরশাদ করেন- وَمَا كَانَ اللَّهُ لِيُعَذِّبَهُمْ وَأَنْتَ فِيهِمْ وَمَا كَانَ اللَّهُ مُعَذِّبَهُمْ وَهُمْ يَسْتَغْفِرُونَ অর্থ : এবং (হে নবী!) আল্লাহ এমন নন যে, আপনি তাদের মাঝে বর্তমান থাকা অবস্থায় তাদেরকে শাস্তি দেবেন এবং তিনি এমনও নন যে, তারা ইস্তিগফারে রত থাকা অবস্থায় তাদেরকে শাস্তি দেবেন। (সূরা আনফাল : ৩৩)

৪. এ দু‘আটি বেশি বেশি পাঠ করা- لَا إِلَهَ إِلَّا أَنْتَ سُبْحَانَكَ إِنِّي كُنْتُ مِنَ الظَّالِمِينَ অর্থ : (হে আল্লাহ!) আপনি ছাড়া কোনো মাবুদ নেই। আপনি সকল ত্রুটি থেকে পবিত্র। নিশ্চয়ই আমি অপরাধী (সূরা আম্বিয়া ৮৭)

৫. বাদ ফযর ও বাদ মাগরিব তিন তিনবার নিম্নোক্ত দু‘আ দুটি পড়া- بِسْمِ اللهِ الَّذِي لَا يَضُرُّ مَعَ اسْمِهِ شَيْءٌ فِي الْأَرْضِ وَلا فِي السَّمَاءِ وَهُوَ السَّمِيعُ الْعَلِيمُ অর্থ : আল্লাহর নামে, যার নামের সাথে আসমান ও যমীনে কোনো বস্তু ক্ষতিসাধন করতে পারে না। আর তিনিই সর্বশ্রোতা ও সর্বজ্ঞানী! (মুসনাদে আহমাদ; হা.নং ৪৪৬)

أعوذ بكلمات الله التامات من شر ما خلق উচ্চারণ : আউযুবিকালিমাতিল্লাহিত্ধসঢ়; তাম্মা-তি মিন শাররি মা খলাক্ব। অর্থ : আমি আল্লাহর কাছে তার পরিপূর্ণ ‘কালেমা’র মাধ্যমে সকল সৃষ্টিজীবের অনিষ্টতা থেকে আশ্রয় চাচ্ছি। (মুসনাদে আহমাদ; হা.নং ৭৮৯৮)

৬. নিম্নোক্ত দুআটি বেশি বেশি পাঠ করা- اللهُمَّ إِنِّي أَعُوذُ بِكَ مِنَ الْبَرَصِ، وَالْجُنُونِ، وَالْجُذَامِ، وَمِنْ سَيِّئِ الْأَسْقَامِ অর্থ: হে আল্লাহ! আমি শে^ত রোগ, উম্মাদনা, কুষ্ঠ রোগ এবং সকল প্রকার দুরারোগ্য ব্যাধি থেকে আপনার কাছে আশ্রয় চাচ্ছি। (মুসনাদে আহমাদ; হা.নং ১৩০০৪)

৭. দিনে যে কোনো সময়ে সূরা ফাতিহা তিনবার, সূরা ইখলাস তিনবার, এবং নিম্নোক্ত দুআটি ৩১৩ বার পড়া- حَسْبُنَا اللَّهُ وَنِعْمَ الْوَكِيلُ অর্থ : আল্লাহ তাআলাই আমাদের জন্য যথেষ্ট। আর তিনি অতি উত্তম অভিভাবক। (সূরা আলে ইমরান; আয়াত ১৭৩)

৮. দিনে যে কোনো সময়ে নিজ পরিবারে সম্মিলিতভাবে সীরাতুন্নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের
নির্ভরযোগ্য কোনো কিতাবের তা‘লীম করা। এটা একটা পরীক্ষিত আমল। নিকট অতীতে হিন্দুস্তানে
একবার এক মহামারি দেখা দেয়। তখন হযরত আশরাফ আলী থানভী রহ. এ মহামারি থেকে বাঁচার জন্য
‘নাশরুত তীব’ নামে সীরাতগ্রন্থ লেখা শুরু করেন। এ সীরাতের বরকতে আল্লাহ তাআলা মহামারি উঠিয়ে
নেন!

নির্ভরযোগ্য সীরাতের কিতাব যেমন সাইয়্যেদ আবুল হাসান নদবী রহ. রচিত কিতাব ‘নবীয়ে রহমাত’
(বাংলা), মুফতী শফী রহ.কৃত ‘সীরাতে খাতামুল আম্বিয়া সা. (বাংলা)।

আতঙ্ক নয়, সতর্ক হই, সচেতন হই, গুনাহ বর্জন করি।

Wednesday, September 11, 2019

11:20 AM

মুসলিমের হক


 ইসলাম একটি মহান ধর্ম মানবতার মুক্তি কল্যাণের জন্য আল্লাহর পক্ষ হতে নির্ধারিত একমাত্র লাইফ ওফ মডেল তথা জীবনাদর্শ। ইসলাম প্রদর্শন করেছে তার অনুসারীদের জন্য সঠিক মত ও পথ। ইসলামে রয়েছে অধিকার কর্তব্যের সুন্দর সমন্বয়। সবাইকে দেয়া হয়েছে তার প্রাপ্য অধিকার। ইসলাম যেসব হক বা অধিকার দিয়েছে, তার মধ্যে অন্যতম হলো, এক মুসলমান ভাইয়ের ওপর অন্য মুসলমান ভাইয়ের অধিকার।
দু্ই মুসলমানের মধ্যে আল্লাহ তায়ালা সৃষ্টি করেছেন ভ্রাতৃত্বের দৃঢ় বন্ধন।আল্লাহ তায়ালা বলেন,
{إِنَّمَا الْمُؤْمِنُونَ إِخْوَةٌ فَأَصْلِحُوا بَيْنَ أَخَوَيْكُمْ وَاتَّقُوا اللَّهَ لَعَلَّكُمْ تُرْحَمُونَ}
-নিশ্চয় মুমিনরা পরস্পর ভাই ভাই। কাজেই তোমরা তোমাদের ভাইদের মধ্যে আপোষ- মীমাংসা করে দাও। আর তোমরা আল্লাহকে ভয় কর, আশা করা যায় তোমরা অনুগ্রহপ্রাপ্ত হবে (সূরা আল হুজুরাত : ১০)
আল্লাহর রাসূলের পবিত্র মুখ থেকে উচ্চারিত হয়েছে,
المسلم اخو المسلم
-এক মুসলমান অন্য মুসলমানের ভাই।(ফাতহুল বারী-খন্ড, 5,পৃষ্ঠা 116)
নিম্নে কয়েকটি হক সম্পর্কে আলোচনা করা হলো।
১. মুসলমান কে ভালোবাসা
এক মুসলমানের ওপর অন্য মুসলমান ভাইয়ের হক হলো, তাকে ভালোবাসা। আনাস রাযি. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন,
ثَلَاثٌ مَنْ كُنَّ فِيهِ وَجَدَ بِهِنَّ حَلَاوَةَ الإِيمَانِ، مَنْ كَانَ اللَّهُ وَرَسُولُهُ أَحَبَّ إِلَيْهِ مِمَّا سِوَاهُمَا، وَأَنْ يُحِبَّ الْمَرْءَ لَا يُحِبُّهُ إِلَّا لِلَّهِ، وَأَنْ يَكْرَهَ أَنْ يَعُودَ فِي الْكُفْرِ بَعْدَ أَنْ أَنْقَذَهُ اللَّهُ مِنْهُ، كَمَا يَكْرَهُ أَنْ يُقْذَفَ فِي النَّارِ
-তিনটি গুণ যার মধ্যে রয়েছে, সে ঈমানের স্বাদ অনুভব করবে : () আল্লাহ তাঁর রাসূল তার কাছে গোটা সৃষ্টিজগত অপেক্ষা অধিক প্রিয় হওয়া () মানুষকে ভালোবাসলে একমাত্র আল্লাহর জন্যই ভালোবাসা () কুফরিতে ফিরে যাওয়া তার কাছে আগুনে নিক্ষিপ্ত হওয়ার মতোই অপ্রিয় অপছন্দনীয় হওয়া (মুসলিম, হাদীস নং43)
আবূ হুরায়রা রাযি. থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন,
سَبْعَةٌ يُظِلُّهُمُ اللَّهُ تَعَالَى فِي ظِلِّهِ يَوْمَ لَا ظِلَّ إِلَّا ظِلُّهُ، إِمَامٌ عَدْلٌ وَشَابٌّ نَشَأَ فِي عِبَادَةِ اللَّهِ، وَرَجُلٌ قَلْبُهُ مُعَلَّقٌ فِي الْمَسَاجِدِ، وَرَجُلَانِ تَحَابَّا فِي اللَّهِ اجْتَمَعَا عَلَيْهِ وَتَفَرَّقَا عَلَيْهِ، وَرَجُلٌ دَعَتْهُ امْرَأَةٌ ذَاتُ مَنْصِبٍ وَجَمَالٍ، فَقَالَ: إِنِّي أَخَافُ اللَّهَ، وَرَجُلٌ تَصَدَّقَ بِصَدَقَةٍ فَأَخْفَاهَا حَتَّى لَا تَعْلَمَ شِمَالُهُ مَا تُنْفِقُ يَمِينُهُ، وَرَجُلٌ ذَكَرَ اللَّهَ خَالِيًا فَفَاضَتْ عَيْنَاهُ
-সাত ব্যক্তিকে আল্লাহ তাআলা তাঁর আরশের নিচে ছায়া দেবেন যেদিন তাঁর ছায়া ছাড়া অন্য কোনো ছায়া থাকবে না : () ন্যায়পরায়ণ বাদশাহ () এমন যুবক যে আল্লাহ তাআলার ইবাদতে বেড়ে উঠেছে () এমন ব্যক্তি যার অন্তর মসজিদের সাথে সম্পৃক্ত () এমন দুই ব্যক্তি, যারা একমাত্র আল্লাহ তাআলার সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে একে অপরকে ভালোবাসেছে। উদ্দেশ্যেই তারা একত্রিত হয়েছে বিচ্ছিন্ন হয়েছে () এমন ব্যক্তি যাকে কোনো সম্ভ্রান্ত বংশীয় রূপসী নারী ব্যভিচারের প্রতি আহ্বান করেছে কিন্তু সে বলেছে, আমি আল্লাহকে ভয় করি () যে ব্যক্তি এমন গোপনভাবে দান করেছে যে, তার ডান হাত যা দান করে বাম হাতও তা টের পায় নি () যে ব্যক্তি নির্জনে আল্লাহকে স্মরণ করেছে আর তার দুই চোখ দিয়ে অশ্রপ্রবাহিত হয়েছে (বুখারী , হাদীস নং 660)
. হাদীসে বর্ণিত ছয়টি হক
حَقُّ الْمُسْلِمِ عَلَى الْمُسْلِمِ سِتٌّ. قِيلَ مَا هُنَّ يَا رَسُولَ اللَّهِ قَالَ : إِذَا لَقِيتَهُ فَسَلِّمْ عَلَيْهِ، وَإِذَا دَعَاكَ فَأَجِبْهُ، وَإِذَا اسْتَنْصَحَكَ فَانْصَحْ لَهُ، وَإِذَا عَطَسَ فَحَمِدَ اللَّهَ فَشمِّتْهُ، وَإِذَا مَرِضَ فَعُدْهُ وَإِذَا مَاتَ فَاتَّبِعْهُ
-এক মুসলমানের ওপর অন্য মুসলমানের ছয়টি হক রয়েছে। বলা হলো সেগুলো কী হে আল্লাহর রাসূল? তিনি বললেন, () তুমি যখন তার সাথে সাক্ষাৎ করবে, তাকে সালাম দেবে () সে যখন তোমাকে দাওয়াত করবে তখন তা গ্রহণ করবে () সে যখন তোমার কাছে নসীহত (পরামর্শ) চাইবে, তখন তুমি তাকে নসীহত করবে () যখন সে হাঁচি দিয়ে আলহামদুলিল্লাহ বলবে, তখন তুমি ইয়ারহামুকাল্লাহ বলবে () যখন সে অসুস্থ হবে, তখন তাকে দেখতে যাবে () এবং যখন সে মারা যাবে, তখন তার জানাযা-দাফন কাফনে অংশগ্রহণ করবে’ (মুসলিম, হাদীস নং2162)

৩.মনে কোনো হিংসা-বিদ্বেষ পুষে না রাখা
এক মুসলমানের ওপর অন্য মুসলমানের আরেকটি হক হলো, তার সম্পর্কে মনে কোনো হিংসা-বিদ্বেষ পুষে না রাখা। কেননা মুমিন হবে পরিষ্কার মনের অধিকারী। তার অন্তর হবে অনাবিল অপঙ্কতার হৃদয় হবে কোমল দয়ার্দ্র। মুমিন যখন রাতে শয়ন করে তখন সে আল্লাহকে সাক্ষী রেখে বলে, পৃথিবীর কারো প্রতি তার একবিন্দু হিংসা-বিদ্বেষ নেই
বুখারী মুসলিমে আনাস রাযি. থেকে বর্ণিত হয়েছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন:
( لَا تَبَاغَضُوا، وَلَا تَدَابَرُوا، وَلَا تَنَافَسُوا، وَكُونُوا عِبَادَ اللَّهِ إِخْوَانًا)
-তোমরা পরস্পরে বিদ্বেষপরায়ন হয়ো না, একে অন্যের পেছনে লেগে না এবং পরস্পরে প্রতিহিংসায় লিপ্ত হয়ো না, বরং একে অন্যের সাথে ভাই-ভাই এক আল্লাহর বান্দা হয়ে যাও’ (মুসলিম)

মুসলমানের প্রতি হিংসা না রাখা এবং তাদের জন্য হৃদয়ে ভালোবাসা লালন করা কত বড় আমল তা বুঝতে পারা যাবে একটি ঘটনা শুনলে। ঘটনাটি আনাস রাযি. থেকে মুসনাদে আহমদে বর্ণিত হয়েছে। তিনি বলেন,
আমরা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে বসা ছিলাম। মুস্তাফা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন,
 এখন তোমাদের সামনে একজন জান্নাতী ব্যক্তি উপস্থিত হবে তারপর আনসারীদের মধ্য থেকে এক ব্যক্তি উপস্থিত হলেন। তার দাড়ি থেকে ফোঁটায় ফোঁটায় উযুর পানি ঝরছিল। বাম হাতে তার জুতো ধরা।
 পরদিন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম অনুরূপ বললেন। অতঃপর প্রথম বারের মতো সেই লোকটিই উপস্থিত হলো। তৃতীয় দিন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম একই কথা বললেন। এবারও প্রথম বারের মতো লোকটিই উপস্থিত হলো। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখন বৈঠক ত্যাগ করলেন, তখন আবদুল্লাহ ইবনে আমর ইবনে তার পিছু নিলেন। তাকে তিনি বললেন,
আমি আমার পিতার সঙ্গে ঝগড়া করেছি। এক পর্যায়ে কসম করেছি তিনদিন আমি তার কাছে যাব না। তুমি যদি আমাকে সময়টুকু তোমার কাছে থাকতে দিতে? তিনি বললেন, ঠিক আছে।
 আনাস রাযি. বলেন, আবদুল্লাহ বলতেন, তিনি তার সাথে তিনটি রাত অতিবাহিত করেছেন। তাকে তিনি রাতে নামায পড়তে দেখেননি। তবে এতটুকু দেখেছেন যে, রাতে যখন তিনি ঘুম থেকে জাগ্রত হন, তখন তিনি পাশ ফিরে ফজরের নামায শুরু হওয়া পর্যন্ত আল্লাহর যিকর তাকবীরে লিপ্ত থাকেন। আবদুল্লাহ বলেন,
তবে আমি তাকে ভালো ছাড়া কারও মন্দ বলতে শুনিনি। অতঃপর যখন তিন রাত অতিবাহিত হলো এবং আমি তার আমলকে সামান্য জ্ঞান করতে লাগলাম তখন আমি তাকে জিজ্ঞেসই করে বসলাম,
 হে আল্লাহর বান্দা, আমার আমার পিতার মাঝে কোনো রাগারাগি বা ছাড়াছাড়ির ঘটনা ঘটেনি তবে আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে তোমার সম্পর্কে তিন দিন বলতে শুনেছি :
 এখন তোমাদের সামনে একজন জান্নাতী লোক উপস্থিত হবে আর ঘটনাক্রমে তিনবারই তুমি উপস্থিত হয়েছ। এজন্য আমি তোমার সান্নিধ্যে এসেছিলাম তুমি কী আমল করো তা দেখতে। যাতে আমি তোমাকে অনুসরণ করতে পারি। কিন্তু আমি তো তোমাকে খুব বেশি আমল করতে দেখলাম না! তাহলে তোমার কোন্ আমল তোমাকে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর বর্ণিত মর্যাদায় পৌঁছালো?
লোকটি বলল, তুমি যা দেখলে তার বেশি কিছুই নয়। আবদুল্লাহ রাযি. বলেন, যখন আমি ফিরে আসলাম, তখন সে আমাকে ডেকে বলল, তুমি যা দেখলে তা তার চেয়ে বেশি কিছুই নয়। তবে আমি মনের মাঝে কোনো মুসলমানকে ঠকানোর চিন্তা রাখি না এবং আল্লাহ তাকে যে নিয়ামত দিয়েছেন তাতে কোনো হিংসা বোধ করি না। আবদুল্লাহ রাযি. বললেন, ‘এটিই তোমাকে উক্ত মর্যাদায় পৌঁছিয়েছে। আর এটিই তো আমরা পারি না
আল্লাহ তায়ালা আমাদের সকলকে প্রত্যেক মুসলমানের হক আদায় করার তাওফিক দান করুন।