তাকসিমে সাবয়ী এর পরিচয়:
তাকসিমে সাবয়ী এর অর্থ হলো, সাত প্রকারে বিভক্ত করণ। সহীহ হাদীস সাত প্রকার এবং প্রত্যেক উপরের প্রকার নীচের প্রকারের চেয়ে তুলনামূলক বেশি সহীহ। প্রকারগুলো এই-
এক. যে হাদীস সহীহ বুখারী ও সহীহ মুসলিম উভয় কিতাবে আছে।
দুই. যে হাদীস শুধু সহীহ বুখারী শরীফে আছে।
তিন. যা শুধু সহীহ মুসলিমে আছে।
চার. যা সহীহ বুখারী ও মুসলিমে নেই তবে এই দুই কিতাবের মানদন্ডে সহীহ।
পাচ. যে হাদীস শুধু বুখারীর মানদন্ডে সহীহ।
ছয়. যা শুধু মুসলিমের মানদন্ডে সহীহ।
সাত. যে হাদীস বুখারী মুসলিমেও নেই, না এই দুই কিতাবের মানদন্ডে সহীহ। তবে অন্য কোনো ইমাম এক সহীহ বলেছেন।
এক. যে হাদীস সহীহ বুখারী ও সহীহ মুসলিম উভয় কিতাবে আছে।
দুই. যে হাদীস শুধু সহীহ বুখারী শরীফে আছে।
তিন. যা শুধু সহীহ মুসলিমে আছে।
চার. যা সহীহ বুখারী ও মুসলিমে নেই তবে এই দুই কিতাবের মানদন্ডে সহীহ।
পাচ. যে হাদীস শুধু বুখারীর মানদন্ডে সহীহ।
ছয়. যা শুধু মুসলিমের মানদন্ডে সহীহ।
সাত. যে হাদীস বুখারী মুসলিমেও নেই, না এই দুই কিতাবের মানদন্ডে সহীহ। তবে অন্য কোনো ইমাম এক সহীহ বলেছেন।
আরো পড়ুন মহামারীতে মুমিনের করণীয়
তাকসিমে সাবয়ীর আবিষ্কারক:
মুহাদ্দিস ইবনুস সালাহ রহমাতুল্লাহি আলাইহি সর্বপ্রথম তাকসিমে সাবয়ীর এই ধারণা প্রকাশ করেন। হিজরী সপ্তম শতাব্দীতে সহীহ হাদীসের এই প্রকারভেদ আবিষ্কার হওয়ার পর অনেক লেখক স্বীয় কিতাবে তা উল্লেখ করেছেন।
তাকসীমে সাবয়ীর অসারতা:
অনেক মুহাক্কিক আলেম বাস্তবতার বিচারে বলেছেন, এই প্রকারভেদ হাদীসের উসূলের আলোকে সহীহ নয়। কেননা, সহীহ হাদীসের প্রকার ও পর্যায় নির্ধারিত হয় হাদীস সহীহ হওয়ার শর্ত ও বৈশিষ্টের ওপর ভিত্তি করে, বিশেষ কোনো কিতাবে থাকা না থাকার ভিত্তিতে নয়।
যেমন অনেক হাদসি শুধু সহীহ বুখারীতে আছে মুসলিমে নেই কিন্তু তার সনদ মুসলিমের মানদন্ডেও সহীহ। এ ধরণের হাদীসকে দ্বিতীয় শ্রেণীতে নেওয়ার কোনো অর্থ হয় না। তেমনি কোনো হাদীস বুখারী শরীফে নেই তবে শুধু মুসলিম শরীফে আছে কিন্তু তার সনদ ইমাম বুখারীর নিকটও সহীহ। এ হাদীসকে তৃতীয় শ্রেণীর অন্তর্ভূক্ত করা কি অর্থহীন নয়? তেমনি ভাবে যেসব হাদীস উভয় ইমামের মানদন্ডে সহীহ সেগুলোকে কি শুধু এই দুই কিতাবে না থাকার কারণে চতুর্থ শ্রেণীতে চলে যাবে।
তাকসীমে সাবয়ীর অসারতা:
অনেক মুহাক্কিক আলেম বাস্তবতার বিচারে বলেছেন, এই প্রকারভেদ হাদীসের উসূলের আলোকে সহীহ নয়। কেননা, সহীহ হাদীসের প্রকার ও পর্যায় নির্ধারিত হয় হাদীস সহীহ হওয়ার শর্ত ও বৈশিষ্টের ওপর ভিত্তি করে, বিশেষ কোনো কিতাবে থাকা না থাকার ভিত্তিতে নয়।
মুফতি রেজাউল করিম |
আরো পড়ুন করোনা পরিস্থিতিতে জামাতের নামাজে এক মুসল্লি অপর মুসল্লি থেকে দূরত্বে দাঁড়াতে পারবে কিনা?
যারা এ তাকসিমে সাবয়ীর সমালোচনা করেছেন:
এই প্রকারভেদকে শাস্ত্রীয় নীতি হিসেবে গ্রহণ করা যায় না। তাই অনেক আহলে ইলম এই তাকসিমের কঠোর সমালোচনা করেছেন। যেমন হাফেয ইবনে হাজার আসকালানী রহমাতুল্লাহি আলাইহি পরিষ্কার ভাষায় বলেছেন,
اما لو رجح قسم علي ما فوقه بامور أخري تقتضي الترجيح فانه يقدم علي ما فوقه
اما لو رجح قسم علي ما فوقه بامور أخري تقتضي الترجيح فانه يقدم علي ما فوقه
اذ قد يعرض للمفوق ما يجعله فاءقا
অর্থাৎ অগ্রগণ্যতার অন্যান্য কারণে কোনো প্রকার যদি তা উপরস্থ প্রকারের চেয়ে অগ্রগামী হয় তাহলে তাকে তার উপরের প্রকারের চেয়ে অগ্রগণ্য করা হবে। কারণ, এই বিন্যাসে উল্লিখিত নিচের প্রকারের বর্ণনার সাথে কখনো কখনো এমন গুণাবলী যুক্ত হয়, যা তাকে উপরের পর্যায়ের বর্ণনার সমকক্ষ বা অগ্রগণ্য করে। [ শরহু নুখবাতিল ফিকার-৩২]
আল্লামা ইবনুল হুমাম রহমাতুল্লাহি আলাইহি তাকসীমে সাবয়ী প্রত্যাখান করতে গিয়ে বলেন,
আল্লামা ইবনুল হুমাম রহমাতুল্লাহি আলাইহি তাকসীমে সাবয়ী প্রত্যাখান করতে গিয়ে বলেন,
وقول من قال: اصح الاحاديث ما في الصحيحين ثم ما انفرد به البخاري ثم ما انفرد به مسلم ثم ما اشتمل علي شرطهما من غيرهما ثم ما اشتمل علي شرط احدهما : تحكم لا يجوز التقليد فيه
অর্থাৎ যারা বলেন যে, অধিক বিশুদ্ধ হাদীস হলো, যে হাদীস সহীহ বুখারী ও সহীহ মুসলিম দুই কিতাবেই আছে। যা শুধু সহীহ মুসলিমে আছে । যা এই দুই কিতাবে নেই তবে এই দুই কিতাবের মানদন্ডে সহীহ। যা শুধু বুখারীর মানদন্ডে সহীহ। যা শুধু মুসলিমের মানদন্ডে সহীহ। যা না এই দুই কিতাবে আছে না এই দুই কিতাবর মানদন্ডে সহীহ। তবে অন্য কোনো ইমাম একে সহীহ বলেছেন। এটা হটকারীতা এর তাকলীদ বা অনুসরণ করা জায়েয নেই। [ ফাতহুল কাদীর ১/২৮৮-২৮৯]আল্লামা জালালুদ্দিন সুয়ূতী রহমাতুল্লাহি আলাইহি পরিস্কার লিখেছেন যে,
اطلاق اصح الاسانيد علي بعض الاسانيد او يصح ذلك من حيث المجموعية دون كل فرد فرد من الاحاديث
অর্থাৎ সহীহ মুসলিমের তুলনায় সহীহ বুখারী অধিক সহীহ হওয়ার অর্থ হলো, সমষ্টিগত বিচারে অধিক সহীহ হওয়া। এই নয় যে, সহীহ বুখারীর প্রতিটি হাদীস সহীহ মুসলিমের প্রতিটি হাদীসের চেয়ে অধিক সহীহ। [তাদরীবুর রাবী ১/৮৮)আল্লামা যারকাশী রহমাতুল্লাহি আলাইহি লিখেছেন, অগ্রগণ্যতার কারণ বিচারে মুহাদ্দিসগণ কখনো কখনো সহীহ মুসলিমের হাদীসকে বূখারীর হাদীসের উপর প্রাধান্য দিয়ে থাকেন।
ইমাম আবু বকর হাযেমী রহমাতুল্লাহি আলাইহি এক হাদীসকে অন্য হাদীসের উপর প্রাধান্য দেওয়ার পঞ্চাশটি কারণ উল্লেখ করেছেন। সেসব ‘প্রাধান্য দেওয়ার কারণসমূহের’ মধ্যে বুখারী ও মুসলিমে বর্ণিত হাদীস যে প্রাধান্য পাবে তার উল্লেখ নেই। বরং তিনি বলেছেন এক হাদীস অন্য হাদীসের উপর প্রাধান্য পায় রাবীর গ্রহণযোগ্যতার কারণে। হাদীসটি কোন কিতাবে বর্ণিত হয়েছে সে বিবেচনায় নয়।
[আল ই’তিবার ফিন নাসিখ ওয়াল মানসুখ-৫৮-৯০]
হাফেয ইরাকি রহমাতুল্লাহি আলাইহি একশত দশটি “উজুহে তারজীহ” উল্লেখ করেছেন। তম্মধ্যে বুখারী মুসলিমের হাদীসকে ১১০ নাম্বারে গণ্য করেছেন।
আব্দুর রশীদ নুমানী রহমাতুল্লাহি আলাইহি বলেন, হাফেয ইবনুস সালাহ রহমাতুল্লাহি আলাইহি এর পূর্বে তাকসীমে সাবয়ীর প্রবক্তা কেউ ছিলো না। তার পরবর্তীতে কেউ কেউ তার অনুসরণ করেছেন। কিন্তু হাফেয ইমাদুদ্দিন ইবনে কাসির রহমাতুল্লাহি আলাইহি “ইখতিসার ফি উলুমুল হাদীসে” তাকসীমে সাবয়ীর উল্লেখ করেননি। এর দ্বারা বুঝা যায় তিনি এর অনুসরন করেননি। বরং তিনি স্পষ্ট ভাবে বলেছেন, ‘মুসনাদে ইমাম আহমাদে’ এমস সনদ ও মতন রয়েছে যা বুখারী মুসলিমের সমপর্যায়ের। যা ইমাম বুখারী ও মুসলিম বর্ণনা করেননি। এমনকি আইম্মায় আরবায়া ও বর্ণনা করেননি।
No comments:
Post a Comment