ব্রেকিং নিউজ

Wednesday, September 11, 2019

মুসলিমের হক


 ইসলাম একটি মহান ধর্ম মানবতার মুক্তি কল্যাণের জন্য আল্লাহর পক্ষ হতে নির্ধারিত একমাত্র লাইফ ওফ মডেল তথা জীবনাদর্শ। ইসলাম প্রদর্শন করেছে তার অনুসারীদের জন্য সঠিক মত ও পথ। ইসলামে রয়েছে অধিকার কর্তব্যের সুন্দর সমন্বয়। সবাইকে দেয়া হয়েছে তার প্রাপ্য অধিকার। ইসলাম যেসব হক বা অধিকার দিয়েছে, তার মধ্যে অন্যতম হলো, এক মুসলমান ভাইয়ের ওপর অন্য মুসলমান ভাইয়ের অধিকার।
দু্ই মুসলমানের মধ্যে আল্লাহ তায়ালা সৃষ্টি করেছেন ভ্রাতৃত্বের দৃঢ় বন্ধন।আল্লাহ তায়ালা বলেন,
{إِنَّمَا الْمُؤْمِنُونَ إِخْوَةٌ فَأَصْلِحُوا بَيْنَ أَخَوَيْكُمْ وَاتَّقُوا اللَّهَ لَعَلَّكُمْ تُرْحَمُونَ}
-নিশ্চয় মুমিনরা পরস্পর ভাই ভাই। কাজেই তোমরা তোমাদের ভাইদের মধ্যে আপোষ- মীমাংসা করে দাও। আর তোমরা আল্লাহকে ভয় কর, আশা করা যায় তোমরা অনুগ্রহপ্রাপ্ত হবে (সূরা আল হুজুরাত : ১০)
আল্লাহর রাসূলের পবিত্র মুখ থেকে উচ্চারিত হয়েছে,
المسلم اخو المسلم
-এক মুসলমান অন্য মুসলমানের ভাই।(ফাতহুল বারী-খন্ড, 5,পৃষ্ঠা 116)
নিম্নে কয়েকটি হক সম্পর্কে আলোচনা করা হলো।
১. মুসলমান কে ভালোবাসা
এক মুসলমানের ওপর অন্য মুসলমান ভাইয়ের হক হলো, তাকে ভালোবাসা। আনাস রাযি. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন,
ثَلَاثٌ مَنْ كُنَّ فِيهِ وَجَدَ بِهِنَّ حَلَاوَةَ الإِيمَانِ، مَنْ كَانَ اللَّهُ وَرَسُولُهُ أَحَبَّ إِلَيْهِ مِمَّا سِوَاهُمَا، وَأَنْ يُحِبَّ الْمَرْءَ لَا يُحِبُّهُ إِلَّا لِلَّهِ، وَأَنْ يَكْرَهَ أَنْ يَعُودَ فِي الْكُفْرِ بَعْدَ أَنْ أَنْقَذَهُ اللَّهُ مِنْهُ، كَمَا يَكْرَهُ أَنْ يُقْذَفَ فِي النَّارِ
-তিনটি গুণ যার মধ্যে রয়েছে, সে ঈমানের স্বাদ অনুভব করবে : () আল্লাহ তাঁর রাসূল তার কাছে গোটা সৃষ্টিজগত অপেক্ষা অধিক প্রিয় হওয়া () মানুষকে ভালোবাসলে একমাত্র আল্লাহর জন্যই ভালোবাসা () কুফরিতে ফিরে যাওয়া তার কাছে আগুনে নিক্ষিপ্ত হওয়ার মতোই অপ্রিয় অপছন্দনীয় হওয়া (মুসলিম, হাদীস নং43)
আবূ হুরায়রা রাযি. থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন,
سَبْعَةٌ يُظِلُّهُمُ اللَّهُ تَعَالَى فِي ظِلِّهِ يَوْمَ لَا ظِلَّ إِلَّا ظِلُّهُ، إِمَامٌ عَدْلٌ وَشَابٌّ نَشَأَ فِي عِبَادَةِ اللَّهِ، وَرَجُلٌ قَلْبُهُ مُعَلَّقٌ فِي الْمَسَاجِدِ، وَرَجُلَانِ تَحَابَّا فِي اللَّهِ اجْتَمَعَا عَلَيْهِ وَتَفَرَّقَا عَلَيْهِ، وَرَجُلٌ دَعَتْهُ امْرَأَةٌ ذَاتُ مَنْصِبٍ وَجَمَالٍ، فَقَالَ: إِنِّي أَخَافُ اللَّهَ، وَرَجُلٌ تَصَدَّقَ بِصَدَقَةٍ فَأَخْفَاهَا حَتَّى لَا تَعْلَمَ شِمَالُهُ مَا تُنْفِقُ يَمِينُهُ، وَرَجُلٌ ذَكَرَ اللَّهَ خَالِيًا فَفَاضَتْ عَيْنَاهُ
-সাত ব্যক্তিকে আল্লাহ তাআলা তাঁর আরশের নিচে ছায়া দেবেন যেদিন তাঁর ছায়া ছাড়া অন্য কোনো ছায়া থাকবে না : () ন্যায়পরায়ণ বাদশাহ () এমন যুবক যে আল্লাহ তাআলার ইবাদতে বেড়ে উঠেছে () এমন ব্যক্তি যার অন্তর মসজিদের সাথে সম্পৃক্ত () এমন দুই ব্যক্তি, যারা একমাত্র আল্লাহ তাআলার সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে একে অপরকে ভালোবাসেছে। উদ্দেশ্যেই তারা একত্রিত হয়েছে বিচ্ছিন্ন হয়েছে () এমন ব্যক্তি যাকে কোনো সম্ভ্রান্ত বংশীয় রূপসী নারী ব্যভিচারের প্রতি আহ্বান করেছে কিন্তু সে বলেছে, আমি আল্লাহকে ভয় করি () যে ব্যক্তি এমন গোপনভাবে দান করেছে যে, তার ডান হাত যা দান করে বাম হাতও তা টের পায় নি () যে ব্যক্তি নির্জনে আল্লাহকে স্মরণ করেছে আর তার দুই চোখ দিয়ে অশ্রপ্রবাহিত হয়েছে (বুখারী , হাদীস নং 660)
. হাদীসে বর্ণিত ছয়টি হক
حَقُّ الْمُسْلِمِ عَلَى الْمُسْلِمِ سِتٌّ. قِيلَ مَا هُنَّ يَا رَسُولَ اللَّهِ قَالَ : إِذَا لَقِيتَهُ فَسَلِّمْ عَلَيْهِ، وَإِذَا دَعَاكَ فَأَجِبْهُ، وَإِذَا اسْتَنْصَحَكَ فَانْصَحْ لَهُ، وَإِذَا عَطَسَ فَحَمِدَ اللَّهَ فَشمِّتْهُ، وَإِذَا مَرِضَ فَعُدْهُ وَإِذَا مَاتَ فَاتَّبِعْهُ
-এক মুসলমানের ওপর অন্য মুসলমানের ছয়টি হক রয়েছে। বলা হলো সেগুলো কী হে আল্লাহর রাসূল? তিনি বললেন, () তুমি যখন তার সাথে সাক্ষাৎ করবে, তাকে সালাম দেবে () সে যখন তোমাকে দাওয়াত করবে তখন তা গ্রহণ করবে () সে যখন তোমার কাছে নসীহত (পরামর্শ) চাইবে, তখন তুমি তাকে নসীহত করবে () যখন সে হাঁচি দিয়ে আলহামদুলিল্লাহ বলবে, তখন তুমি ইয়ারহামুকাল্লাহ বলবে () যখন সে অসুস্থ হবে, তখন তাকে দেখতে যাবে () এবং যখন সে মারা যাবে, তখন তার জানাযা-দাফন কাফনে অংশগ্রহণ করবে’ (মুসলিম, হাদীস নং2162)

৩.মনে কোনো হিংসা-বিদ্বেষ পুষে না রাখা
এক মুসলমানের ওপর অন্য মুসলমানের আরেকটি হক হলো, তার সম্পর্কে মনে কোনো হিংসা-বিদ্বেষ পুষে না রাখা। কেননা মুমিন হবে পরিষ্কার মনের অধিকারী। তার অন্তর হবে অনাবিল অপঙ্কতার হৃদয় হবে কোমল দয়ার্দ্র। মুমিন যখন রাতে শয়ন করে তখন সে আল্লাহকে সাক্ষী রেখে বলে, পৃথিবীর কারো প্রতি তার একবিন্দু হিংসা-বিদ্বেষ নেই
বুখারী মুসলিমে আনাস রাযি. থেকে বর্ণিত হয়েছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন:
( لَا تَبَاغَضُوا، وَلَا تَدَابَرُوا، وَلَا تَنَافَسُوا، وَكُونُوا عِبَادَ اللَّهِ إِخْوَانًا)
-তোমরা পরস্পরে বিদ্বেষপরায়ন হয়ো না, একে অন্যের পেছনে লেগে না এবং পরস্পরে প্রতিহিংসায় লিপ্ত হয়ো না, বরং একে অন্যের সাথে ভাই-ভাই এক আল্লাহর বান্দা হয়ে যাও’ (মুসলিম)

মুসলমানের প্রতি হিংসা না রাখা এবং তাদের জন্য হৃদয়ে ভালোবাসা লালন করা কত বড় আমল তা বুঝতে পারা যাবে একটি ঘটনা শুনলে। ঘটনাটি আনাস রাযি. থেকে মুসনাদে আহমদে বর্ণিত হয়েছে। তিনি বলেন,
আমরা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে বসা ছিলাম। মুস্তাফা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন,
 এখন তোমাদের সামনে একজন জান্নাতী ব্যক্তি উপস্থিত হবে তারপর আনসারীদের মধ্য থেকে এক ব্যক্তি উপস্থিত হলেন। তার দাড়ি থেকে ফোঁটায় ফোঁটায় উযুর পানি ঝরছিল। বাম হাতে তার জুতো ধরা।
 পরদিন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম অনুরূপ বললেন। অতঃপর প্রথম বারের মতো সেই লোকটিই উপস্থিত হলো। তৃতীয় দিন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম একই কথা বললেন। এবারও প্রথম বারের মতো লোকটিই উপস্থিত হলো। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখন বৈঠক ত্যাগ করলেন, তখন আবদুল্লাহ ইবনে আমর ইবনে তার পিছু নিলেন। তাকে তিনি বললেন,
আমি আমার পিতার সঙ্গে ঝগড়া করেছি। এক পর্যায়ে কসম করেছি তিনদিন আমি তার কাছে যাব না। তুমি যদি আমাকে সময়টুকু তোমার কাছে থাকতে দিতে? তিনি বললেন, ঠিক আছে।
 আনাস রাযি. বলেন, আবদুল্লাহ বলতেন, তিনি তার সাথে তিনটি রাত অতিবাহিত করেছেন। তাকে তিনি রাতে নামায পড়তে দেখেননি। তবে এতটুকু দেখেছেন যে, রাতে যখন তিনি ঘুম থেকে জাগ্রত হন, তখন তিনি পাশ ফিরে ফজরের নামায শুরু হওয়া পর্যন্ত আল্লাহর যিকর তাকবীরে লিপ্ত থাকেন। আবদুল্লাহ বলেন,
তবে আমি তাকে ভালো ছাড়া কারও মন্দ বলতে শুনিনি। অতঃপর যখন তিন রাত অতিবাহিত হলো এবং আমি তার আমলকে সামান্য জ্ঞান করতে লাগলাম তখন আমি তাকে জিজ্ঞেসই করে বসলাম,
 হে আল্লাহর বান্দা, আমার আমার পিতার মাঝে কোনো রাগারাগি বা ছাড়াছাড়ির ঘটনা ঘটেনি তবে আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে তোমার সম্পর্কে তিন দিন বলতে শুনেছি :
 এখন তোমাদের সামনে একজন জান্নাতী লোক উপস্থিত হবে আর ঘটনাক্রমে তিনবারই তুমি উপস্থিত হয়েছ। এজন্য আমি তোমার সান্নিধ্যে এসেছিলাম তুমি কী আমল করো তা দেখতে। যাতে আমি তোমাকে অনুসরণ করতে পারি। কিন্তু আমি তো তোমাকে খুব বেশি আমল করতে দেখলাম না! তাহলে তোমার কোন্ আমল তোমাকে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর বর্ণিত মর্যাদায় পৌঁছালো?
লোকটি বলল, তুমি যা দেখলে তার বেশি কিছুই নয়। আবদুল্লাহ রাযি. বলেন, যখন আমি ফিরে আসলাম, তখন সে আমাকে ডেকে বলল, তুমি যা দেখলে তা তার চেয়ে বেশি কিছুই নয়। তবে আমি মনের মাঝে কোনো মুসলমানকে ঠকানোর চিন্তা রাখি না এবং আল্লাহ তাকে যে নিয়ামত দিয়েছেন তাতে কোনো হিংসা বোধ করি না। আবদুল্লাহ রাযি. বললেন, ‘এটিই তোমাকে উক্ত মর্যাদায় পৌঁছিয়েছে। আর এটিই তো আমরা পারি না
আল্লাহ তায়ালা আমাদের সকলকে প্রত্যেক মুসলমানের হক আদায় করার তাওফিক দান করুন।

No comments:

Post a Comment